আমরা কেন কোর’আনে বিশ্বাস করি কোরআনের চ্যালেঞ্জ বলতে কী বুঝায়? কোরআনের চ্যালেঞ্জ ছিল ‘কোরআনের অনুরুপ কিছু নিয়ে আস’। আর এই ‘চ্যালেঞ্জ’ বলতে অনেক কিছু বুঝায়, কেবল কিছু শব্দের সমষ্টিযুক্ত বাক্য নয় যা অনেক সমালোচনাকারীরা মনে করে-এটা নিতান্তই সরল ও অবুঝ উপলব্ধি। এই চ্যালেঞ্জ অনেক কিছুই হতে পারে যেমন ১। কোরআনের সৌন্দর্যের মত সৌন্দর্যময় কিছু তৈরি করা। ২। কোরআনের মত শক্তিশালী জিনিস তৈরি করা। ৩। কোন ব্যক্তির উপর কোরআনের যে প্রভাব সেটা তৈরি করা। ৪। একটা সমাজের উপর কোরআনের যে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা। অর্থাৎ এই চ্যালেঞ্জ এক ধরণের নয়, অনেক কিছুর হতে পারে। এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হল– কোরআন কত বছরে অবতীর্ণ হয়েছিল? দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই ২৩ বছরে কোরআন কী করেছিল আরব সমাজে? কোন ধরণের পরিবর্তন এনেছিল তাদের মাঝে? ঐতিহাসিক দৃষ্টি… কোরআন নাযিল হয়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই কোরআনের প্রভাবে কি হল সেই সমাজ ও তার মানুষের উপর, তা একবার দেখুন… ঐ সমাজ বহু ঈশ্বরবাদী সমাজ থেকে পরিবর্তিত হয়ে এক আল্লাহতে ইবাদাতকারী সমাজে পরিণত হল। একটা সমাজ পূর্ণরুপে পাল্টে গেল, একেবারে পূর্ণরুপে। তাদের মধ্যে মানুষের মর্যাদায় কোন বৈষম্য রইল না …কালো, সাদা, আফ্রিকান, আরবী, অনারবী সবাই একই কাতারে নামাজ পড়তে শুরু করল। তারা ভাবত নারীরা কিছুই না, কিন্তু সেই পরিবর্তিত সমাজের নারীরাই হল সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘তাকওয়া’(সদা আল্লাহর উপস্থিতির চিন্তা) শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি একমাত্র মায়ে’দের ছাড়া। আল্লাহ মায়েদের এত মর্যাদা দিলেন! সকল গোত্র সমান হয়ে গেল। তাদের ব্যবসা, খাওয়া-পান করার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আসল। তারা হালাল ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু ত্যাগ করল। পিতা-মাতার সম্পর্ক কেমন হবে, সন্তানদের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, আত্মীয়দের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, বন্ধুদের সাথে কেমন হবে সম্পর্ক, অমুসলিমদের সাথে কেমন সম্পর্ক ও ব্যবহার হবে, স্বামী-স্ত্রীর...
যারা আরবী জানেন ও যারা জানেন না – তারা এই শব্দগুলোকে একটু মনযোগ দিয়ে উচ্চারণ করুন আর দেখুন কোনো মিল খুঁজে পান কি না: যাকারিইইয়া, খাফিইইয়া, শাকিইইয়াহ, রাজিইইয়াহ, ওয়ালিইইয়া, শারিইইয়া, নাবিইইয়া, হাইইয়া ইত্যাদি। যারা আরবী জানেন না তারা কি কিছু লক্ষ্য করেছেন? যারা আরবী জানেন না তারা নিশ্চয় শব্দগুলো কীভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তা লক্ষ্য করেছেন। সবগুলো একই সুরে অন্তমিলের সুর ছড়াচ্ছে। এটি সূরা মারিয়ামে রয়েছে, যা পবিত্র কুর’আনের অন্যান্য সূরার মতোই একটি সূরা। প্রত্যেকটি আয়াতের সমাপান্তে শব্দগুলোতে অন্তমিলের সুরবিন্যাস রয়েছে। যিকরু রাহমাতি রাব্বিকা আব্দাহু যাকারিইইয়াহ, ইজ নাদা রাব্বাহু নিদাআন খাফিইইয়া (২-৩) ইত্যাদি। আর এভাবে এটা সমাপান্তে সুর করে চলতেই থাকছে…চলতেই থাকছে…। কিন্তু, কিছুদূর যাওয়ার পর কী দেখতে পেলেন? সূর পাল্টে গেছে (ইয়ামতারুন)?!! কিন্তু কেন? এটা আর আগের শব্দগুলো খাফিইইয়হ, শাকিইইয়া বা ইনশিইইয়া এগুলোর মতো সুর মিলছে না শব্দান্তে। এখন শুরু হয়েছে শব্দান্তের মিলের ভিন্ন সুরধ্বনি: ইয়ামতারুন, ফা ইয়াকুন, মুস্তাকুন, আযিম, মুবিন, ইউমিনুন। সুতরাং, এভাবে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রাথমিক কিছু আয়াত যেগুলো একই সুরের অন্তমিলের সুরধ্বনি, আর কিছুদূর যাওয়ার পর একই সূরায় অন্তমিলের ভিন্ন সুরধ্বনি। অথচ একই সূরায়, কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ভিন্ন সুর। যখন বিষয়টি ছিল একই, নবীদের কাহিনী, তখন সূরের অন্তমিলের ধ্বনিও ছিল একই-অভিন্ন। কিন্তু যখনই বিষয়টি (Topic of Subject) পরিবর্তিত হয়েছে তখনই ভিন্ন অন্তমিলের সুরধ্বনি এসেছে। এটা এক প্রকার প্যারাগ্রাফ-এর মতো যেখানে প্রতি প্যারায় একই টপিকের ভিন্ন ভিন্ন দিকের আলোচনার মতো। আপনি স্পেস দেন লেখায়, ট্যাব চাপেন বেশি দূরে যাওয়ার জন্য, সরিয়ে নেন, একটার উপর আরেকটা লেখেন, বা অনেকটটা জায়গা ছেড়েও দেন লেখার বিভিন্ন ধরণের জন্য। কিন্তু কুর’আনে এগুলো নেই! তাহলে কুর’আনে কী আছে? এটার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সুরবিন্যাস। যেহেতু একটি বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে, আর সেজন্য শ্রোতা যাতে বুঝতে পারে যে এখন...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম [উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অবলম্বনে অনুবাদ] জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয়সাধন… সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহর পরিচিতি দিয়ে (প্রথম ৩ আয়াত)। তাই বলা যায় ‘আল্লাহ’ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’ দিয়ে শুরু এই সূরার। এ থেকে বোঝা যায় যে আমাদের যদি ‘জ্ঞান’ থাকে তবেই এই ‘জ্ঞান’ কর্মের পথপ্রদর্শন করতে পারে (কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো কীভাবে?!)। ‘আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান’ আমাদেরকে কর্মের দিকে ধাবিত করে আর সেই কর্ম হল আল্লাহর দাস হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রচেষ্টা করা (মাঝখানের আয়াত অর্থাৎ ৪ নং আয়াতঃ ই’ইয়াকানা’অবুদু ওয়া ই’ইয়াকানাসতা’ইন)। আমরা যদি এই জ্ঞানের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই আর কাজ করে এ’দুটোর মাঝে সমন্বয়সাধন করতে পারি তবেই আমরা সরলপথে থাকব – সিরাতাল মুসতাকিম, এমন একটি পথ যে পথে পূর্ববর্তীরাও সেসব মানুষেরা চলেছেন যারা জ্ঞানকে কর্মে রুপান্তরিত করেছিলেন (হেদায়েত – শেষ ৩ আয়াত)। সুতরাং হিদায়াত বা সৎপথ হল জ্ঞানকে কর্মের মাধ্যমে সমন্বয় করা। এভাবে সরলপথের বিরপীত ভ্রষ্টপথ এর দুটি অবস্থার যেকোন একটি হতে পারেঃ এক. যখন আমাদের জ্ঞান আছে কিন্তু আমল নেই এবং দুই. যখন আমাদের আমল আছে কিন্তু জ্ঞান নেই। এরপরেই সূরাটিতে বলা হচ্ছে, আমরা যেন তাদের মত না হই যাদের জ্ঞান ছিল কিন্তু আমল ছিল না (মাগজুব – অভিশপ্ত – সৎপথের আমলহীনলোকেরা তো মন্দই করে – তারা তো মানুষের প্রতি মন্দ করার কারণে অভিশাপে অভিশপ্ত হবেই) এবং এরপরে বলছে, তাদের মতও যেন না হই যাদের আমল ছিল কিন্তু জ্ঞান ছিল না (ওয়ালাজ্জাল্লিন – যারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল – জ্ঞান না থাকার কারণে)। সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায়… আল্লাহ সম্পর্কে ‘জ্ঞান’ – প্রথম ৩ আয়াত (এ জ্ঞান যখন পথপ্রদর্শনের দিকে নিয়ে যায় তখন) আমাল – মধ্যখানের ১টি আয়াত (এখন জ্ঞান আর আমাল-এর সমন্বয় হল…তাহলে এটা নিয়ে যাবে) হেদায়েত-এ – শেষের ৩টি আয়াতে (অর্থাৎ...