প্রত্যাশার মাস রামাদান (৩য় পর্ব)

আর বুঝতে চেষ্টা করুন, আপনারা অনেকেই হয়তো মনে করেন যে আপনি একসময় আল্লাহর অনেক কাছাকাছি ছিলেন। “আমি অনেক ভালো মানুষ ছিলাম” বা “আমার হৃদয় এখনকার চেয়ে আগে আরও পরিষ্কার ছিল।” কোন কারণে হয়তো আপনি সেই পথ হারিয়ে ফেলেছেন আর অনেক দূরেও চলে গিয়েছেন। এখন আপনার মনে হচ্ছে যে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে এতই দূরে চলে গিয়েছেন যে আপনার জন্য আর কোন আশা নেই। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আপনি একদম হারিয়ে গেলেন! আর আমি আপনাকে এতটা বলতে পারিঃ আপনি বা আমি আল্লাহর কাছ থেকে নিজেদের যতই দূরে মনে করি না কেন, আল্লাহ প্রথম যেই মানুষটিকে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন সেই দূরত্বের সাথে আমাদের এই দূরত্বের তুলনা চলে না। সেটা খুবই বড় ডিমোশন ছিল। এমন একজন যিনি আল্লাহর এতো নিকটে ছিলেন যে, আল্লাহ সরাসরি তাঁর সাথে কথা বলতেন। তারপর আল্লাহ তাঁকে বললেন, তোমার সাথে আর সরাসরি কথা বলবো না, এখন থেকে তোমার সাথে ওহী পাঠানোর মাধ্যমে কথা বলবো। এতো বড় ডিমোশন সত্ত্বেও তাঁর আশা ছিল যে, আল্লাহর পাঠানো ওহীর মাধ্যমে আমি আবার আল্লাহর কাছাকাছি হতে পারবো। কুরআন আপনাকে জাহান্নামে পাঠাতে আসেনি। কুরআন তো বলছে না যে আপনার কোন আশা নেই। কুরআন আল্লাহর প্রতিজ্ঞা যে আমরা যতই ভুল করি বা আল্লাহর কাছ থেকে দূরে চলে যাই না কেন, আমরা আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) এর মত মতো হবো এবং তাওবা করে ফিরে আসবো। আমরা কখনোই ইবলিসের মতো হবো না। ইবলিস… আর আরবিতে ‘আবলাসা’ ক্রিয়ার একটি অর্থ হল আশা ছেড়ে দেয়া। আমরা নিরাশ হবো না। আমরা নিজেদের মাঝে আশা ধরে রাখবো। আর যখন আপনি নিজেকে বলতে থাকেন যে আপনার জীবনের আর অর্থ নেই, “আমি খারাপ মানুষ, আমার কী-ই বা আর করার আছে?” আপনি যখন এমনটা বলা শুরু করছেন, তখন আপনি আসলে ইবলিসের সুন্নত/পথ...

প্রত্যাশার মাস রামাদান – ২য় পর্ব

একটু কল্পনা করুন, আদম (আ) এর কেমন খারাপ লাগতো! যখন তিনি ভাবতেন যে, তিনি আল্লাহর কত নিকটে ছিলেন, আর এখন তিনি আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা থেকে কত দূরে! তাকে এতো বেশি সম্মান এবং মর্যাদা দেয়া হয় যে ফেরেশতাদের পর্যন্ত নির্দেশ দেয়া হয় তাঁকে সেজদা করার জন্য। আর এখন তিনি এই পৃথিবীতে। প্রসঙ্গক্রমে, যে আয়াতে তাঁকে পৃথিবীতে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হয় – اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ – ” তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও।” এখানে আমাদের পিতা আদম (আ), আমাদের মা হাওয়া (আ) এবং ইবলিশ তিনজনকেই নীচে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হয়। অর্থাৎ – এখন আমাকে এই জায়গা ইবলিশের সাথে শেয়ার করতে হবে! আমি ফেরেশতাদের সাথে থাকতাম আর এখন ইবলিশ এবং তার চেলা-চামুন্ডাদের সাথে থাকতে হবে?? আমার অবস্থাটা কেমন হয়ে গেল। এটা অপমানকর। তাঁর উপর তিনি আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল থেকে দূরে থাকার বেদনা তো অনুভব করতেনই। আল্লাহ তাকে এভাবে পাঠিয়ে দেয়ার সময় বললেন তোমার এবং তোমার সন্তানদের এখানে আবার উঠে আসার সুযোগ রয়েছে। তোমাদেরকে নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু আবার উঠে আসার সুযোগ রয়েছে। তাই আল্লাহ তাকে বলেছেন – فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ – “অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’।” জান্নাত থেকে নেমে যাও। কিন্তু যখন আমার পক্ষ থেকে কোনো পথনির্দেশনা আসবে…এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ শধু আদম (আ) নয় বরং তার সন্তানদের প্রতিও যদি কোনো পথনির্দেশনা আসে, ইতিহাসের যে কোনো সময়…. যখন আমি হেদায়েত পাঠাবো তখন যে কেউ তা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না’। তাদের কোন ভয় থাকবে না...

আপনি কি টর্নেডো হয়ে ঘরে ঢুকেন?

“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।” (২৫ঃ৭৪)  এর মানে কী জানেন? এর মানে হলো – আপনি আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের দেখে এতো খুশি হয়ে যান যে খুশিতে কান্না চলে আসে। যখন দেখেন যে আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে এবং সে কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে, এটা দেখে আপনি এতো খুশি হোন যে চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু নেমে আসে। যখন দেখেন যে, আপনার স্ত্রী কত কঠোর পরিশ্রম করে আপনার সন্তানদের যত্ন নিচ্ছে – এটা দেখে আপনি এতো খুশি হোন যে আনন্দে চোখ ভিজে উঠে। আবার স্ত্রী যখন দেখে যে, তার স্বামী সন্তানদের নিয়ে মসজিদে যাচ্ছে, তখন স্ত্রীরও চোখ দিয়ে খুশিতে আনন্দ অশ্রু নেমে আসে। আমাদের স্বামী-স্ত্রীরাও কান্না করেন, কিন্তু তারা আসলে খুশিতে কান্না করেন না। তারা ভিন্ন কারণে কাঁদেন। আমরা আল্লাহর নিকট আনন্দ অশ্রু কামনা করছি। আমরা আমাদের পরিবারের উপর খুশি থাকতে চাই। কিভাবে আমরা এটা করবো ? এখন তো বাসায় এসেই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। প্রতিদিন। বাসায় প্রবেশ করলেই কথোপকথনের চিত্রটা এমন হয় – স্ত্রী: তোমার দেরি হলো কেন? স্বামী: কেন জিজ্ঞেস করছো? জানোনা যে রাস্তায় ট্রাফিক। জানালা দিয়ে একটু তাকিয়ে দেখো। প্রতিদিন, প্রতিদিন এরূপ ঝগড়া বাধিয়ে দেন। তারপর আপনার মেজাজ এতো খারাপ হয়ে যায় যে, বাচ্চাদের সাথেও রাগ দেখাতে শুরু করেন। -“তোমার হাতে খেলনা কেন?” “তোমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?” “এই বাসায় কেউ খুশি থাকতে পারবে না। ” “তোমার বাড়ির কাজ করেছো?” বাচ্চা তখন ভয়ে ভয়ে বলে – “আ -আ -জ আমাদের কোনো হোম ওয়ার্ক ছিল না।” – “কেন ছিল না। দাঁড়াও, আমি তোমার স্কুলে অভিযোগ করবো।” ইয়া আল্লাহ! এটা “কুররাতা আইনুন” (চক্ষু শীতলকারী আচরণ নয়) নয়। এমন অনেকেই আছেন যারা নামাজ পড়তে মসজিদে...

হিজাব

আলহামদুলিল্লাহ এখন আমেরিকাতে অনেক ভাল, তরুণ ইসলামিক স্কলার আসছেন যারা বেশ ভাল বক্তাও। এবং আমার মনে হয় তাদেরও এই ইস্যুগুলোতে আরো বেশি জোর দেওয়া দরকার। যাই হোক আমি হিজাবের একদম প্রাথমিক জরুরী বিষয়গুলো নিয়ে বলবো। এই বিষয়ে সবরকম মতামতকে যদি পাশেও সরিয়ে রাখি, তাহলেও নুন্যতম যেটুকু লাগবেই সেটা হচ্ছে, এটুকু অংশ ঢাকতে হবে (কপাল কান হয়ে চিবুক পর্যন্ত বুঝাচ্ছে) এবং মহিলাদের সামনের বুকের অংশ ঢিলাঢালা ভাবে ঢাকা থাকতে হবে। এটা হচ্ছে প্রথম অংশ। ‘জিলবাব’ হচ্ছে পোশাকের দ্বিতীয় অংশ। ও আরেকটি কথা যেটাকে আমরা হিজাব বলি, মানে মাথা বুক ঢাকার যে অংশ, কুরআনে এটিকে বলা হয়েছে খিমার। খিমার শব্দটি এসেছে খামার থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছু ঢাকা। খামার দিয়ে কুরআনে অ্যালকোহলকেও নির্দেশ করা করা হয়েছে, কেন? কারন এটি মানুষের বোধ শক্তি ঢেকে দেয়। মানুষ তখন আর ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। শব্দটা বেশ মজার এই অর্থে যে অনেকে বলে আমি তো ওয়াইন খাচ্ছি না, বীয়ার খাচ্ছি। কারন সাধারণত খামার দিয়ে ওয়াইন বুঝানো হয়। কিন্তু আসলে যেই জিনিসই মানুষের বুদ্ধি লোপ করে তাই খামার। যাইহোক, খিমার মানে যা ঢেকে রাখে। এটা হচ্ছে উপরের অংশের পোশাক। এবার আসা যাক বাকী অংশের ব্যাপারে। এটা আসলে হবার কথা একটা বাহ্যিক পরিচ্ছদ যা পুরোটা ঢেকে রাখে মানে নিচে কিছুর উপরে পড়তে হবে। এটা কি রকম হবে তার কিছু প্রাথমিক নিয়ম আছে, এটা এমন কিছু হবে যা আটোসাটো নয়, হবে ঢিলাঢালা। নিচের দিকে এটার দৈর্ঘ্য কেমন হবে সেটা নিয়ে ভিন্নমত আছে, কারো মতে হাটুর নিচ পর্যন্ত যেতে হবে কারো মতে একেবারে গোড়ালি পর্যন্ত যাবে। কিন্তু সর্বসম্মতি ক্রমে বলা যায় এটা বেশ লম্বা হতে হবে, একটি লম্বা ওভারগার্মেন্ট যা শরীরের সাথে লেগে থাকে না। আবার মতভেদ আছে যে এটা এক পিস হবে না দুই পীস...

সূরা ইখলাস হতে শিক্ষামূলক উপদেশ

“আহাদ” এই ধারণাটি তথা একক সত্ত্বার এই ধারণাটি…… পাকিস্থানে ইসলামিক ধর্মতত্ত্বের বিশিষ্ট একজন লেখক ডঃ রফী’ উদ্দীন এই সুরা সম্বন্ধে মন্তব‍্য করতে গিয়ে অতি আশ্চর্য‍্যজনক কিছু তত্ত্ব প্রদান করেন। আমি আসলেই এর প্রশংসা করি, এবং আমি মনে করি আধুনিক শ্রোতাদের মনে এই তত্ত্বগুলো গেঁথে দেওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ মানব জাতির মধ্যে তাঁর সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে তৈরী করেছেন। মানব জাতি শুরু থেকেই জানত যে, সর্বোচ্চ সত্ত্বা আল্লাহ বিদ‍্যমান। এরকম নয় যে, একজন উপাস‍্য আছেন, তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এখন আমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। না, সেটা নয়। বরঞ্চ তিনিই রব, তিনিই প্রভু। আমার জীবনের মূল লক্ষ‍্যবস্তু হচ্ছে তিনি যা চান তা করা। এটা আমার সর্বোচ্চ আদর্শ। তাঁর দাসে পরিণত হওয়াই হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এটাই হবে আমার জন‍্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয়। আল্লাহর নবী (সাঃ), তাঁর বড় সম্মান ছিল তিনি আল্লাহর ‘‘عبد’’ হয়েছিলেন। আল্লাহর দাস হওয়া সবচেয়ে সম্মানের বিষয়। এটাই হচ্ছে জীবনের মূল লক্ষ‍্যবস্তু এবং আল্লাহ সেই লক্ষ‍্যবস্তুটি সকল মানবজাতির অন্তরে খোদাই করে দিয়েছেন। কিন্তু যদি আপনি সেই লক্ষ‍্যবস্তুর দিশা হারিয়ে ফেলেন তখন যেটা হয়… সেই লক্ষ‍্যবস্তু পরিপূর্ণতার পিপাসা বা ক্ষুধা আপনার মধ্যে বিরাজ করে, যদ্বারা আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আপনার ক্ষুধা যখন স্বাস্থ‍্যকর খাবার দ্বারা নিবারিত হয় না, তখন কী দিয়ে নিবারণ করেন? আপনি যদি সঠিক খাবার না পান, আপনি কি তাহলে বলবেন যে, আমি খাবই না? না। যখন কোন ব‍্যক্তি ক্ষুধায় কাতর থাকে এবং তার পছন্দের কোন খাবার যদি তখন সে না পায় অথবা কোন স্বাস্থ‍্যকর খাবারও নেই, শুধু আছে ময়লা আবর্জনা, গাছের ছাল-পালা মানুষ কি তা নিয়েই চোষাচুষি শুরু করবে না? যখন সে এরকম পরিিস্থতির স্বীকার হবে? অবশ‍্যই করবে। যখন আপনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যকে ভুলে যান, সেটা যখন আর আপনার লক্ষ্যবস্তু...