আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি।
আমরা এখন একাদশ পারায় আছি এবং এটা ১০ম সূরা, সূরা ইউনুস এর ৬৫ ও ৬৬ নং আয়াত। আমি ৬৫ নং আয়াতটিই বিশেষভাবে আলোচনা করতে চাচ্ছি।
আর তাদের কথায় দুঃখ নিয়ো না। আসলে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর। তিনিই শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
জেনে রেখো,আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর। আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে (নিজেদের মনগড়া) কিছু শরীকদের ডাকছে তারা নিছক আন্দাজ ও ধারণার অনুগামী এবং তারা শুধু অনুমানই করে।
এই ১০ম সূরায় আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে বলেছেন-(ওয়া লা-ইয়াহযুনকা কাউলুহুম) অর্থাৎ তারা আপনাকে যা বলে তাতে আপনার দুঃখ পাওয়া উচিত নয়। তাদের কথায় আপনি কষ্ট পাবেননা। আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-কে এই আয়াতে বলা হয়েছে যে রাসূল (সাঃ) এমন কিছু শুনবেন যাতে তাঁর দুঃখ পাওয়াই স্বাভাবিক। তাই আল্লাহ বলেছেন- ওসব কথায় নিজেকে কষ্ট পেতে দিবেন না ; আপনাকে তাদের কথার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হতে হবে। কারন আপনি তাদের কথায় নিজেকে আঘাতপ্রাপ্ত হতে দিলে তারা আপনাকে হতাশ করে ফেলবে এবং আপনি আপনার কাজ সঠিকভাবে করতে পারবেন না। আপনাকে তো ইসলামের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে- যে বাণী আশার, আশাবাদী হওয়ার, যে বাণী পুনরায় মানুষকে তার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে দেয়। আপনিই যদি হতাশ হয়ে পড়েন তাহলে মানবতা কি করে তার প্রেরণা খুঁজে পাবে?কিভাবে তারা পাবে কর্মস্পৃহা?সুতরাং তারা কি বলে এতে আপনি প্রভাবিত হবেন না।
আর যদি আপনার মনে হয় যে এটা, তার যা বলে তা, অপমানকর- আপনার জন্য বা ইসলামের জন্য বা আল্লাহ্র জন্য, তবে জেনে রাখুন (ইন্নাল ইজ্জাতা লিল্লাহি জামিয়া)-কোন সন্দেহ নেই যে কর্তৃত্ব, সম্মান, মর্যাদা আল্লাহ্রই, এর সবগুলোই। সকল মর্যাদা, সকল কর্তৃত্ব, সকল সম্মান। কখনো এটা চিন্তা করবেন না যে আল্লাহ্কে অসম্মানিত করা যেতে পারে। তা তো অসম্ভব কারণ আল্লাহ্ই এর মালিক। যেহেতু আল্লাহ্ই এর মালিক তাই আপনার এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন কারন নাই।
(হুয়াসসামিউল আলিম) এমন না যে তারা যা বলেছে আল্লাহ্ তা শোনেন নাই। আর তারা যা বলছে আল্লাহ্ তা জানেন, এমনকি যা আপনি শোনেন নাই আল্লাহ্ তাও জানেন। আল্লাহ্ তো সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞ। আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে দিয়েছেন সুস্পষ্ট উপদেশ যে কিভাবে নোংরা কথা শোনা সত্ত্বেও সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
আপনারা যারা প্রচুর অনলাইনে থাকেন, তারা অনেক সময়ই ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিওতে অথবা ব্লগে এমন সব মন্তব্য দেখেন যা ইসলামের জন্য খুবই অপমানজনক। এসব মন্তব্য পড়ে আপনার বিরক্তির উদ্রেক হয় যে, ‘মানুষ কিভাবে এমন কথা বলতে পারে আল্লাহ্ সম্পর্কে? তাঁর রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে?অবিশ্বাস করা এক জিনিশ কিন্তু যে ধরনের ঘৃণা এবং ঔদ্বত্যপূর্ণ বিদ্বেষ মানুষের মুখ থেকে বের হয় সেটা দেখে আপনার মনে হবে যে, “এরা কোন ধরনের মানুষ?কেন এরা এই রকম কথা বলে?” আপনার বিরক্ত লাগে এবং কথাগুলো আপনাকে কষ্ট দেয়।যদি আপনার কষ্ট হয় কারন আপনার বিশ্বাস আছে, আমাদের বিশ্বাসের সাথে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-এর বিশ্বাসের তো কোন তুলনাই হয়না। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-ও তাদের কথায় কষ্ট পেতেন। কিন্তু আল্লাহ্ তাঁকেই বলেছেন, এই মর্মপীড়া যেন আপনাকে প্রভাবিত না করে। কারন তাদের কথাতো আল্লাহ্র মর্যাদার কোন হ্রাস করতে পারেনা। সর্ব অবস্থাতেই আল্লাহ্ মর্যাদাশীল। তাই আপনি এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। উপরন্তু তারা যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন। তাই তাদেরকে এর মূল্য দিতে হবে। আর এমন না যে আল্লাহ্র তাদের উপর কর্তৃত্ব নাই । সে যেমন আমাদের প্রভু, তারা স্বীকৃতি দিক আর না দিক, তিনি তাদেরও প্রভু। (আলা ইন্না লিল্লাহি মান ফি আস-সামাওয়াত ওয়া মান ফিল-আরদ) আপনি তো জানেন যে আসমানে ও জমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ্ তার সবকিছুর মালিক। তিনি সবকিছুর স্বত্বাধিকারী। এবং তারা যা বলে তা থেকে তারা নিস্তার পাবেনা।তাই আপনার কাজকে এটা বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।
আমরা যখন ওসব মন্দ, বিদ্বেষপূর্ণ কথায় প্রভাবিত হই এবং তাদের ঘৃণার প্রতি সাড়া দেই তার মানে দাঁড়ায় যে আমাদের কি করা উচিত তা নিয়ে আমাদের সঠিক কোন ধারনা নাই।তাদের ওসব কথা শুধু লক্ষ্যচ্যুতিই ঘটায়। এছাড়া আর কিছুই করেনা।
সঠিকভাবে ধর্মকে শিখে সেই ধর্মের সত্যিকার অর্থটা মার্জিতভাবে অন্যদের সাথে শেয়ার করাই আমার, আপনার সত্যিকারের মিশন এবং আমাদেরকে এই কাজ করে যেতে হবে।যারা ওসব ঔদ্বত্যপূর্ণ, ঘৃণাভরা, লক্ষ্য থেকে বিমুখ করার ছল করে, তারা তো আমাদের ঘৃণা করেই যাবে, আমরা যাই করিনা কেন।রাসূল (সাঃ) কে বলা হয়েছে যে ওসব বিদ্বেষপূর্ণ কথার কারনে তাঁর মিশন এর লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয় ঠিক তেমনি, আমরাও যেন ওসব কথাকে আমাদের লক্ষ্যচ্যুতির কারন হতে না দেই।
আল্লাহ্ আযওয়াযাল আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্যে অটুট রাখুন এবং ইসলামের মূল বাণীর উপর আমাদের কায়েম রাখুন এবং আজ আমাদের চারদিকে যে এত ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ কথা তা যেন আমাদেরকে আমাদের অনন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে না পারে।
বারাকাল্লাহু ওয়ালিকুম ওয়াসসালামু আলাইকুম, কুরআন উইকলি।